Impact of IOAA on Education

শিক্ষা ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এর প্রভাব
বাংলাদেশে এ জ্যোতির্বিজ্ঞান এর বর্তমান অবস্থা

সারাংশ: জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এবং একই রকম প্রতিযোগিতাগুলো অনেক দেশে প্রায় অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে আয়োজিত হয়ে আসছে। ২০১৯ সালে আয়োজিত হয়ে যায় সবচেয়ে বড় এরকমই একটি প্রতিযোগিতা, ১৩তম  আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড। এর প্রভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসারিত হচ্ছে একটি বৃহৎ সংখ্যক স্কুল/কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে যারা হয়ত জ্যোতির্বিজ্ঞানকে পড়াশুনার বিষয় হিসেবে গণ্য করত না; এছাড়াও যেসব দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়ানো হয় না (বা এখন আর হয় না) সেসব দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার একটি আদর্শ মানদণ্ড তৈরি করতে, শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে, তাদের একটি লক্ষ্য প্রদান করতে যেন তারা জ্যোতির্বিজ্ঞান এর প্রতি তাদের আগ্রহকে এগিয়ে নিতে পারে এবং এই আগ্রহ ও পরিশ্রম এর ফলাফল হিসেবে পদক, খ্যাতি এবং  সারাবিশ্বের আকর্ষনীয় স্থানগুলোতে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের মতও অনেকে আছে, তাদের দেশে এবং বাইরের দেশে জানান দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এর পরেই অনেক শিক্ষার্থী জ্যোতির্বিজ্ঞানকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে এবং গবেষণায় অংশগ্রহণ করছে। আমরা বিশ্বাস করি জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার কাঠামো গড়তে এবং সার্বজনীন একটি উঠতি মহাকাশপ্রেমী কমিউনিটি তৈরি করতে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে কাজ করছে।  

১। ভূমিকা:

      
বিভিন্ন দেশে “অলিম্পিয়াড” আসলে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া (১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী) শিক্ষার্থীদের জন্য একরকম এক্সট্রা কারিকুলার প্রতিযোগিতা যা তাদের একাডেমিক যেমন বিজ্ঞান, গণিত এবং ভাষাভিত্তিক জ্ঞান যাচাই-এ আয়োজন করা হয়। সাধারণত একাডেমিক সিলেবাস এর চেয়ে বৃহৎ সিলেবাস নিয়ে এই অলিম্পিয়াড গুলোতে রাখা হয় এমন সব প্রশ্ন যা তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মেধা, তাদের যুক্তি ক্ষমতা যাচাই করে। জাতীয় পর্যায়ে থাকতে পারে কয়েকটি পর্যায়ে যা আবার বিভক্ত করা হতে পারে বয়স এবং শ্রেণী গ্রুপ অনুযায়ী যা শেষ হয় ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে মেডাল এবং অন্যান্য পুরষ্কার এর মধ্যে দিয়ে। ভাল ফলাফল অন্যান্য সুবিধাও এনে দিতে পারে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি বা বৃত্তির পেতে সুবিধা করা।        
একই রকম প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিযোগিতা গুলোকে সম্মলিত ভাবে বলা হয় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড যার মধ্যে জ্যোতির্বিজ্ঞান এর জন্যই রয়েছে ২ টি প্রতিযোগিতাঃ আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড- IAO (প্রতিষ্ঠাপিত ১৯৯৬) এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড -IOAA  (প্রতিষ্ঠাপিত ২০০৭)। 

বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড  (বিডিওএএ)। এই আর্টিকেল এর মূল বিষয়বস্তু IOAA এবং BDOAA নিয়ে। 

২। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড:
    
     আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (সংক্ষেপে IOAA) সম্পর্কে কথা ওঠে ২০০৬ সালের আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড (IPhO) থেকে। একটি স্বাধীন অনুষ্ঠান; যেটি একটি গণতান্ত্রিক কমিটি ও IPhO নিয়মবিধি মেনে পরিচালিত হবে যা বর্তমান যুগের জন্য উপযোগী সকল দক্ষতা এবং টপিক কে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হবে  যা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান চর্চায় প্রয়োজনীয়। ২০০৭ সালে ২২ টি দেশের অংশগ্রহনের পর থেকে IOAA এখন একটি নিয়মিত আয়োজন যেখানে ২০১৮ পর্যন্ত সবগুলো মহাদেশ থেকে ৪০ টির বেশি দেশ অংশগ্রহণ করছে প্রতিবছর।

২.১ । বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড

    
২০১৮ সালের পুর্বে IOAA এর জন্য বাংলাদেশ দলের নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন (BAA) আয়োজিত এস্ট্রো-অলিম্পিয়াডের। ২০১৮ এর শুরুর দিকে ৮ই ফেব্রুয়ারি এই দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় Bangladesh Olympiad on Astronomy and Astrophysics Committee (BDOAAC) এর নিকট। প্রাক্তন আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী যারা অনেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা লাভ করছে এছাড়াও মহাকাশ বিজ্ঞানপ্রেমী অনেককর্মী ও অভিজ্ঞ ছাত্র-শিক্ষকমন্ডলীদের নিয়ে করা হয় এই কমিটি। এই কমিটির আয়োজনে প্রথমবারের মত ১০ টি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় প্রায় হাজারখানেক উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে মাধ্যমে সফল ভাবে নির্বাচন করা হয় ১২০ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগীকে যারা ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নেয় জাতীয় পর্বে। জাতীয় পর্বে বাছাই করে ক্যাম্পে চূড়ান্ত ৫ জন এবং ২ জন দল নেতা নিয়ে ১২তম আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে চায়নার বেইজিং বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করে। এবারে বাংলাদেশ এর ফলাফল ছিল সামগ্রিক ভাবে ভাল যেখানে ৪ জন প্রতিযোগীর প্রত্যেকে ৪০% এর এর বেশি নম্বর পায় এবং ১ জন প্রতিযোগী বিশেষ সম্মাননা পুরষ্কার লাভ করে। এটি প্রথম বার অংশগ্রহন হিসেবে বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এর অভাবনীয় সাফল্য।

অংশগ্রহণ সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া আছে FAQs পেজে!

২.২ । ফরম্যাট

     প্রত্যেক বছরে IOAA, ১০ দিন ব্যপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হয়ে থাকে যেখানে ৩টি আলাদা আলাদা রাউন্ড থাকে; তত্ত্বীয়/ থিওরি রাউন্ড (৫০% নম্বর এটিতে থাকে মোট পরীক্ষার নম্বরে), ডেটা এনালাইসিস (২৫% নম্বরে) এবং রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ রাউন্ড (২৫% নম্বরে)।

থিওরি রাউন্ডে থাকে ছোট এবং বড় ধরণের প্রশ্ন যেগুলো ফিজিক্যাল বা এস্ট্রোফিজিক্যাল সূত্র এর নির্ভরশীল প্রতিপাদন,হিসাব এবং নির্ণয় ভিত্তিক হয়ে থাকে। সিলেবাসটি যেকোনো Astronomy/Astrophysics এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম কয়েকবছরের কারিকুলামের মতই হয়। প্রশ্নগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এর সমাধানে ক্যালকুলাস এর ব্যবহার না করা লাগে কিন্তু কেউ যদি ক্যালকুলাস ব্যবহার করে কোন প্রশ্নের সমাধান করে তবে সে উপযুক্ত নম্বরই পাবে। অলিম্পিয়াড এর সমস্যা সমাধানে বাধাধারা কোন নিয়ম নেই, একজন প্রতিযোগী তার মত বিভিন্ন উপায়ে প্রশ্নের সমধান করতে পারবে। বিভিন্ন সায়েন্টিফিক মান ও সূত্র একটি ডেটাশিট এ প্রদান করা হয়, যেসব সূত্র স্কুল পড়ুয়াদের জানার কথা না এই লেভেলে তা প্রয়োজনে বুঝিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। যেসব প্রশ্ন “শিক্ষার সাথে পরীক্ষা” এর ধরণ মেনে করা হয় যা হয়ত স্কুল-কলেজ লেভেল করানো হয় না সেগুলোতে প্রয়োজনীয় ছবি/ইনফোগ্রাফিক্স এবং ডেটা টেবিল বা সাম্প্রতিক ও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল বলে দেওয়া থাকতে পারে যাতে প্রতিযোগী নিজেই সমধানের মাধ্যমে কিছু নতুন শিখতে পারে।  

ডেটা এনালাইসিস ও রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ রাউন্ড সম্মিলিত ভাবে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যবহারিক দিকটাকে তুলে ধরে। ডেটা এনালাইসিস অংশ এর জন্য প্রতিযোগীকে সাধারণ পরিসংখ্যান এর জ্ঞান থাকা লাগে। ডেটা থেকে সহজ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও গাণিতিক ভাবে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা সহ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ এর বিভিন্ন উপাদান এর নীতি প্রণয়নে এই ধরণের প্রশ্ন গুলো করা হয়। পূর্বের পরীক্ষা গুলোতে ক্যামেরার সিসিডি ইমেজ বিশ্লেষণ, স্পেকট্রাম থেকে গ্যালাক্সির রোটেশন নির্নয় ও এক্সোপ্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ এর মত সমস্যা এসেছিল। রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ রাউন্ডে আকাশ চেনা, টেলিস্কোপ নিয়ে কাজ করা এবং প্ল্যানেটেরিয়াম বা বাস্তব সিম্যুলেশন এর মাধ্যমে মহাজাগতিক বস্তু নির্ণয়, খোঁজা ও সংশ্লিষ্ট ক্যাল্কুলেশন করতে হয়। প্রতিযোগীদের আগে থেকে আকাশ চেনা এবং টেলিস্কোপ সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

একটি দলীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন বরাবরই করা হয়ে থাকে যার কাঠামো বছরভিত্তিক আলাদা হয়ে থাকে। দলীয় প্রতিযোগিতা গুলো প্রতিযোগীদের আসল বিজ্ঞান জগতে যেভাবে কাজ করা হয় তার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। কোন বছরে একটি দেশের পুরা দল নিয়ে গ্রুপ করা হতে পারে বা বিভিন্ন দেশের কয়েকজনকে নিয়ে একটি গ্রুপ করা হতে পারে যা সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিযোগীদের মাঝে।
     
   পরীক্ষা গুলোর মাঝে প্রতিযোগীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণ করে আয়োজক দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যর সাথে পরিচিত হতে। অনেক শিক্ষার্থীদের জন্য এটি তাদের প্রথম বিদেশ যাত্রা অন্য দূরের একটি দেশে যা একটি নতুন ও আলাদা অভিজ্ঞতা। অনুষ্ঠান চলাকালে আয়োজক দেশ প্রতিযোগীর খাওয়া থাকা এবং বিনোদনের খরচ বহন করে শুধু আয়োজক দেশে ভ্রমণ খরচ বাদে। “প্রধান” দলের সাধারণত কোন রেজিষ্ট্রেশন ফি থাকেনা।

২.৩। প্রশ্ন প্রণয়ন

     লোকাল অর্গানাইজাররা প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষার প্রত্যেক অংশের জন্য প্রশ্ন তৈরি করেন (কিছু “অতিরিক্ত” প্রশ্নসহ ) যা পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড কতৃক আলোচিত ও পরিমার্জিত হয়। সবাই অনুমোদন দিলে বিভিন্ন দেশের দল নেতা তাদের মাতৃভাষা অনুযায়ী প্রশ্ন অনুবাদ এর কাজ করেন  কারণ সকল প্রতিযোগী ইংরেজি জানবে বা উত্তরদিতে পারবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই (Fig 1) । মার্কিং এর সুবিধার্থে প্রশ্ন এমন ভাবে করা হয়ে থাকে যেন খুব কম ভাষার প্রয়োগে উত্তরগুলো করা যায় গাণিতিক ভাবে। মার্ক প্রদান করা হয় সঠিক নিয়ম, প্রয়োগ এবং ফলাফলের ভিত্তিতে। শুধু সাংখ্যিক মান না এক্ষেত্রে সঠিক একক এবং “Significant Value” এর প্রয়োগ বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা হয়। পরীক্ষা শেষ হলে খাতা দেখা শুরু হয় দেখানে লোকাল-জুরি এবং সংশ্লিষ্ট দলনেতা উভয়ে খাতা দেখেন নিজের মত করে। পরে মডারেশন এর সময় ২ টি খাতা দেখার ফলাফল তুলনা করে অসামঞ্জস্যগুলো দূর করা হয় এবং এভাবে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

রেজাল্ট এর ভিত্তিতে স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ পদক এবং বিশেষ সম্মাননা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। প্রত্যেক বিভাগে উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জনকারীকে আলাদা ভাবে পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে। এসব পুরষ্কার হচ্ছে–

  • Best Theory (Highest Scorer)

  • Best Data (Highest Scorer)

  • Best Observation (Highest Scorer)

  • Absolute Winner (Highest Scorer Overall)

  • Best Team (Winning Team on Team Competition)

৩। প্রভাব

     
আমরা দেখেছি যে, একটি দল হিসেবে অন্য একটি দেশ ভ্রমণ এর সুযোগ এবং প্রাক্তন প্রতিযোগীদের ভাল অভিজ্ঞতা অনেক স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের জ্যোতির্বিজ্ঞানে উৎসাহিত করেছে যারা প্রতিযোগিতা ভালবাসে কিন্তু এমনি এই নিয়ে এগোতে পারত না। এভাবে অনেক জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াড আয়োজিত হচ্ছে IOAA কে কেন্দ্র করে। এছাড়াও IOAA অনেক দেশে একটি আদর্শ জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার কাঠামো হিসেবে কাজ করছে সেসব দেশে যেখানে কারিকুলামে জ্যোতির্বিজ্ঞান এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি সিলেবাস, পূর্ব বছরের প্রশ্ন-সমাধান এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি লক্ষ্য স্থাপন করে যাতে তারা পুরষ্কার, খ্যাতি এবং অন্যান্য দেশে ভ্রমনের সুযোগ পেয়ে পারে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার মাধ্যমে। আসলে সবচেয়ে ভাল বিষয়টি হচ্ছে অনেকে এইসব ইভেন্ট এর মাধ্যমে জানতে পারে তাদের মত “জ্যোতির্বিজ্ঞান পাগল” আরও আছে তাদের দেশে এবং দেশের বাইরে তারা একা নয়!

       IOAA তে অংশগ্রহণের ইচ্ছা অনেক দেশেই জাতীয় অলিম্পিয়াডের সুযোগ সৃষ্টি করেছে যে দেশের উৎসাহীরা হয়ত IOAA এর ব্যাপারে শুনেছে কিন্তু জাতীয় কোন ব্যবস্থা না থাকায় অংশগ্রহণ করতে পারছিল না (যেমন বাংলাদেশ, মালি,  মালয়শিয়া , সিংগাপুর , যুক্তরাজ্য)। এটি অপরপক্ষে সেসব দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের সুযোগ করে দিচ্ছে। বেশিরভাগ দেশে বাছাই এর জন্য সিলেকশন রাউন্ড বা ট্রেইনিং ক্যাম্প এর আয়োজন করা হয়ে থাকে একটি নির্বাচিত গ্রুপকে নিয়ে। এটি কয়েকদিন ব্যাপী (যেমন বাংলাদেশ, পোল্যান্ড) বা কয়েক সপ্তাহব্যাপী (যেমন ইরান) হতে পারে। পূর্বের বছর গুলো সিলেকশন এবং IOAA এর প্রশ্নগুলো এই ক্ষেত্রে আদর্শ প্রস্তুতি সহায়ক হিসেবে কাজ করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রতিযোগী এবং ট্রেইনারদের জন্য। IOAA1 থেকেও কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক বই বের করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে BDOAA থেকেও করা হবে যা গুতুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সেসব দেশে যেখানে জ্যোতির্বিজ্ঞান এর উপর পাঠ্যবই পাওয়া যায় না। 

যত্নশীলভাবে প্রশ্ন বাছাই ও যেখানে সম্ভব সেখানে শিক্ষাসফর, লেকাচার IOAA শিক্ষার্থীদের বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে কি কি নতুন ঘটে চলছে তার সাথে এমন ভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে যাতে তারা সেসবের পিছের বিজ্ঞানটাকে তাদের লেভেল থেকেই বুঝতে পারে। প্রতিযোগীরা এছাড়াও পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সাথে সাক্ষাৎ এর সুযোগ পাচ্ছে তাদের নিজের দেশে এবং বাইরের দেশের, এভাবে অনেকে অনুপ্রাণিত হয় কারণ বেশীরভাগ দলনেতা জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন যারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়, মানমন্দির বা প্ল্যানেটেরিয়াম এ কাজ করে থাকেন (অবিশ্বাস্য হলেও স্কুল শিক্ষকরা মোট দলনেতা্র ১/৮ ভাগ হয়ে থাকেন)।  
   
     এসবের অভিজ্ঞতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করেন এবং গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের সাথে (2 এর প্রথম লেখক ছিলেন একজন প্রাক্তন স্বর্ণপদক বিজয়ী)। প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত অনুশীলন পরবর্তিতে অনেক প্রতিযোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অনান্যদের তুলনায় এগিয়ে নিতেও সাহায্য করে। সাম্প্রতিক বছরগুলায় দেখা গেছে প্রাক্তন প্রতিযোগীরা দলনেতা হিসেবে ফিরে আসছে (এই আর্টিকেল এর অনুবাদক ২০১৬ সালের প্রতিযোগী ছিলেন এবং ২০১৮-২০২০ সালে দলনেতা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, এছাড়াও ২০১৮ সালের যুক্তরাষ্ট্র এর ২ জন, ইরান এর ১জন, গ্রিস এর ১ জন দলনেতা প্রাক্তন প্রতিযোগী ছিলেন)। প্রাক্তন প্রতিযোগীরা “IOAA Culture” কে অন্য দেশেও প্রচার করছে তাদের কাজ কিংবা পড়াশুনার সময় অন্য দেশে অবস্থান কালে (কানাডা এবং যুক্তরাজ্য জলন্ত উদাহরণ)। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে এই ইভেন্ট নিজেকেই গড়ে তুলছে এবং আগামী প্রজন্মের জ্যোতির্বিজ্ঞানী তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।

     পরিশেষে IOAA সংগঠন এর প্রভাব, আয়োজক দেশগুলোর শিক্ষা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখছে। IOAA আয়োজনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচার আরও বাড়ছে এবং পরীক্ষায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ইভেন্ট শেষে ঐ দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও ভলিন্টিয়ার সংগঠনকে বিতরণ করে দেওয়া হচ্ছে যারা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষা, চর্চা সর্বোপরি বিজ্ঞান চর্চায় অবদান রাখছে।

বাংলাদেশে প্রভাব
     
       বাংলাদেশে বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য কোন অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। বাংলাদেশে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক ক্লাব এবং সংস্থা থাকলেও গাণিতিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে আসল জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ভাল প্ল্যাটফর্ম নেই কিন্তু এক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গ হিসেবে কাজ করছে।   এখন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী সারাবছর ধরে অলিম্পিয়াড অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করে এবং পড়াশুনা করে যা সম্পুর্ন তাদের পাঠ্যক্রমের বাইরে। এছাড়াও সারাবছর ধরেই আয়োজিত হয় আকাশ পর্যবেক্ষণ কর্মাশালা, জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মাশালা (রাজশাহী, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বিশেষ করে)। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্য বই মেলাতেও বের হয় অলিম্পিয়াড কেন্দ্রিক বই (২০১৯ সালে বের হয়েছে “জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান – লক্ষ্য যখন অলিম্পিয়াড”) যা BDOAA কমিটি থেকে না বের করা হলেও আমরা অনেক উৎসাহী এরকম অগ্রগতি দেখে। নটেরডেম কলেজ, রাজশাহী কলেজ এর বিজ্ঞান ক্লাবগুলো বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞান কেন্দ্রিক বিভিন্ন আয়োজন শুরু করেছে জাতীয় অলিম্পিয়াড এর আদলে যা এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে! 

৪। পরিশেষ

      আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড একটি সুনির্দিষ্ট অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্যোতির্বিজ্ঞান কে পৌছে দিচ্ছে প্রতিদান দিচ্ছে তাদের প্রত্যেকটি প্রচেষ্টার। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে পাঠ্যক্রমের বাইরের আগ্রহকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সুন্দর চোখে দেখেন না। “বিনিময় পড়াশুনা” হিসেবে হলেও অনেকে এই অলিম্পিয়াড এর উপরে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

    এই আর্টিকেল এর লেখক এবং অনুবাদকরা ইতিমধ্যে অবলোকন করেছেন যে ভবিষ্যতের অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী এই অলিম্পিয়াড প্রথার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে এবং তারা উৎসাহিত করতে চান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগণ কে যেন তারা IOAA এর প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশপ্রেমী তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান চর্চায় সাহায্য করতে। আমরা আরও চাই দেশ ও বিদেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গরা তাদের দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড দলকে যথাসাধ্য সাহায্য করবেন।   

আপনাদের সকলের প্রতি BDOAA কমিটির আহ্বান বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চাকে এগিয়ে নিতে আপনাদের সাহায্য এর হাত বাড়িয়ে দিন।

The authors of this article are, respectively, the current President and General Secretary of the IOAA
Greg Stachowski 1,3, and Aniket Sule 2,3

  1. Pedagogical University of Cracow, Podchorazych 2, 30-084 Krakow, Poland

  2. Homi Bhabha Centre for Science Education, VN Purav Marg, Mankhurd, 400088 Mumbai, India

  3. International Olympiad on Astronomy and Astrophysics

Translation and Edition: Fahim Rajit Hossain

  1. Co-founder, Trainer, Bangladesh Olympiad on Astronomy and Astrophysics

  2. Bangladesh Team Leader, 12th International Olympiad on Astronomy and Astrophysics

এই আর্টিকেল এর পিডিএফ

Impact of IOAA and BDOAA on EducationDownload

Impact of IOAA on Education (main article)Download

References

1. A. S ule, International Olympiads on Astronomy and Astrophysics – Problems and Solutions (Orient Blackswan, 2015, ISBN 978-8173719806)
2. P. Mróz, A. Udalski, P. Pietrukowicz, M. K. Szymański, I. Soszyński, Ł. Wyrzykowski, R. Poleski, S. Kozłowski, J. Skowron, K. Ulaczyk, D. Skowron, M. Pawlak Nature 537, 649 (2016)